সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব

আসালামু আলাইকুম । সবাই ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আজকে অনেকদিন পরে আপনাদের জন্য লিখা শুরু করলাম। কি লিখবো কি লিখবো ভাবছিলাম। তখন মনে হল  কিছুদিন আগে আমার একটা পোস্টে আপনাদের করা সবচেয়ে বেশি উত্তর “ফ্রী টাইম কিভাবে বের করা যায় সেটা চিন্তা করি”। আজকে আমি শেয়ার করবো কেন time management করা জরুরী, কিভাবে সময় ম্যানেজ করতে পারেন ও সবশেষে আমার সময় কিভাবে ম্যানেজ করি। 

প্রথমে বলে নেই আমি কোন  মোটিভেশনাল রাইটার বা স্পিকার না। এটা  লিখতে আমি বিভিন্ন বই, জার্নাল ও ভিডিও এর সাহায্য নিয়েছি। সেই সাথে আমার সাথে শেয়ার করা বিভিন্ন মানুষের চ্যাট ও আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এই লেখাটি সাজানো। যদি কার সাথে মিলে যায় তাহলে লেখক দায়ী নয়।

সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব

সময় মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ।

চলুন  এই কথার অন্তর্নিহিত তত্ত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করি। আজকে রিকশাতে উঠলাম, রিকশা চালকের বয়স ৩৫-৪০। তার সাথে এক কথা দুই কথায় জানতে পাড়লাম তার মা-বাবা তাকে পড়াশুনা করাতে অনেক চেষ্টা করলেও সে পড়াশুনায় মনযোগী হয়নি। খেলাধুলাতে মগ্ন ছিল, তার ফলাফল সে এখন রিকশা চালায়। বস্তিতে বসবাস করে। এবার আমরা ভাবি সে যদি লেখা পড়া করতো তাহলে আজকে তাকে রিকশা চালিয়ে জীবিকানির্বাহ করতে হত না। তার মানে সময়ের অপব্যবহারে কারণে তার জীবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এই সময় সম্পদের সদব্যবহার করে কেউ নিজের জীবনকে করে তুলে ভাস্কর আবার কেউ এর অপব্যবহারে হয়ে যায় ধ্বংস।

পৃথিবীতে কর্ম অনন্ত, কিন্তু মানবজীবন সংকীর্ণ।

মানুষের জীবনের পরিধি খুবই স্বল্প, এই স্বল্প জীবনকাল কে সঠিক ভাবে ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ যারা  অতিক্রম করতে পারে তারাই পরিধান করে সফলতার মুকুট। ভাবছেন কিভাবে এই কঠিন পাহাড় অতিক্রম করবেন। আসুন  সেই ব্যপারে একটু একটু আলোচনা করি।

সফলতা কিভাবে পাবেন?

আপনি কি চান, কেন চান ও কিভাবে চান তাই আগে ঠিক করুন। তারপর আপনি কি চান তা আপনার দৈনন্দিন ক্ষেত্রে লিখে ফেলুন । মনে করি যে, আমার টার্গেট হয় নিস সাইট থেকে ছয় মাসের মাথায় ১০০ ডলার কামানো। তাহলে আমি আমার শোবার ঘরে, মোবাইল স্ক্রিন, কম্পিউটার স্ক্রিন ইত্যাদি জায়গায় আমার টার্গেট লিখে রাখবো। লিখলে কি ফল হবে ভাবছেন? আপনি ঘুম থেকে উঠে কিংবা মোবাইলে গেম খেলতে গেলে, ফেসবুক চ্যাট করতে গেলেই  আপনার স্কিন দেখলেই কাজ সারা। দেখবেন অটোমেটিক আপনার কাজের দিকে মন চলে যাবে।

ভাবছেন মন গেল কিন্তু কাজ কিভাবে হবে জানেন না। তার জন্য আপনি আপনার নোটবুকে কাজের স্টেপগুলি সাজান। তারপর স্টেপ বাই স্টেপ কাজগুলিকে করে যান। সফলতা আপনি পাবেনই ।

 মনে রাখবেন বিজয়ীরা ভিন্নধরনের কাজ করেনা, তারা একই কাজ করে ভিন্নভাবে। তাই আপনি ভুল করছেন না শুদ্ধ করছেন তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে একাগ্রতার সহিত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে লেগে থাকুন সফল আপনি হবেনই।  

time management

কিভাবে করে আপনার সময় ম্যানেজমেন্ট করবেন?  

সবচেয়ে জটিল পার্ট আমাদের জীবনের সেই অংশ নিয়ে আমরা এখানে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করবো।

যারা অন্য কাজের সাথে অ্যাফিলিয়েট করেন

 প্রথমে আপনি আপনার ২৪ ঘণ্টা সময়ের ৭ ঘণ্টা ঘুমের জন্য বাদ দিন, তারপর ২ঘণ্টা খাবার, গোসল ও প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের জন্য বরাদ্দ করুন। বাকি রইল ১৫ ঘণ্টা। আপনার পড়াশুনা/ অফিস/ ব্যবসার জন্য  যাবার আসবার জন্য ৩ ঘণ্টা বরাদ্দ করুন। আপনার পড়াশুনা/ অফিস/ ব্যবসার জন্য  জন্য ৮ ঘণ্টা বরাদ্দ করুন। বাকি  ৩ ঘণ্টা আপনার গোল নিয়ে কাজ করুন । রইল বাকি ১ঘণ্টা আপনার প্রিয় কাজবাজ করুন(বই পড়ুন, মুভি দেখুন, কার্টুন দেখুন ইত্যাদি) ,বেডে টানটান হয়ে সুয়ে থাকুন,  বউ কিংবা গার্ল ফ্রেন্ড বন্ধু বান্ধবদের সময় দিন একটু।  

যারা ফুল টাইম অ্যাফিলিয়েট করেন

প্রথমে আপনি আপনার ২৪ ঘণ্টা সময়ের ৭ ঘণ্টা ঘুমের জন্য বাদ দিন, তারপর ২ঘন্টা খাবার, গোসল ও প্রাকিতিক কর্ম সম্পাদনের জন্য বরাদ্দ করুন। বাকি রইল ১৫ ঘণ্টা। আপনি ৪ ঘণ্টা করে শিফট করে নেন তিনটি, প্রতি শিফট পরপর আপনি একটু টুকটাক এক্সসারসাইজ করুন, আপনার প্রিয় কাজবাজ করুন(বই পড়ুন, মুভি দেখুন, কার্টুন দেখুন ইত্যাদি) ,বেডে টানটান হয়ে সুয়ে থাকুন,  বউ কিংবা গার্ল ফ্রেন্ড বন্ধু বান্ধবদের সময় দিন একটু।   

আর পড়ুনঃ নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে কেন জানবেন?

ভাবছেন খুবই স্ট্রেস পরবে আপনার উপরে, আসলে কিছু পেতে হলে আপনার কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এটা আমার দেয়া একটা টাইম ফ্রেম আপনি আপনার টাইম ফ্রেম সেট করুন ও সেটা আপনার ডায়েরি, নোটবুক, দেয়ালে কাগজ দিয়ে লাগিয়ে রাখুন। এবার সময় মেনে মেনে কাজ করুন। দেখবেন সময় অভাব আপনি বোধ করছেন না।

কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তরে আমি যা বলি

#১. এত কাজ কিভাবে করেন আপনি?

আমি সব সময় টাইম ম্যানেজমেন্টে জোর দিয়ে থাকি। প্রতিদিন নিজেকে নিজে কাজে নিয়োজিত করি, সেই কাজ শেষ করে শেষ মার্ক করে রাখি। ঘুমাতে যাবার পূর্বে কতভাগ কাজ সম্পূর্ণ করলাম তার হিসেবে একবার চোখ বুলিয়ে নেই। এইভাবে করে আমি পুর মাসের হিসাব নেই, হিসাব মিলিয়ে নেই এই মাসের আমি কত ভাগ কাজ শেষ করেছি। কতটুকু আমার প্রোডাক্টিভিটি ছিল। এভাবে যখন আপনি নিজেই নিজের হিসাব নিবেন তখন আপনার কাজের সময় নিয়ে অভাববোধ করবেন না। একটি প্রবাদ বলছি “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালাত মানুষের বিবেক” তাই আপনি আপনার বিবেকের কাছে জবাবদিহি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

#২. মাঝে মাঝে আমি রুটিন মানি ও মাঝে মাঝে আমি ভাঙি

এই সব ভাইদের জন্য বলছি আপনাকে মাঝে মাঝে খেতে দেই মাঝে মাঝে যদি না দেই আপনি যেমন সুস্ত থাকতে পারবেন না, তেমনিভাবে আপনি আপনার  কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবেন না। তাই রুটিন মানুন, প্রথম দিক কার রুটিন একটু ফ্লেক্সিবল রাখুন। তারপর একটু একটু করে রুটিন হার্ড করুন। তাহলে মাঝে মাঝে রুটিন মানবেন এবার মানবেন না সেই রোগ থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। তারপর যদি না পারেন তাহলে আমার সোজা কথা আপনি স্বপ্ন দেখবেন তার বাস্তবায়ন হবে কিংবা হবেনা তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেনা এমনকি আপনি নিজেও না।

এপিজি আবুল কালামের উক্তি  “স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন হল সেটাই যেটা পুরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না”।

আর পড়ুনঃ রিচার্জ YOUR ডাউন ব্যাটারি

#৩. যদি রুটিনে যে কাজ দিয়েছি তা সঠিক সময় না শেষ হয়

 আপনি তারপরও পরবর্তী কাজ শুরু করে দিবেন। পরবর্তী দিন এবার যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকে শুরু করুন। তারপর রুটিন মেনে কাজ করুন। কোন কাজ আমরা এক টানা করতে থাকলে আমাদের মাথায় এটা নিয়ে একটা আইডিয়া ক্রিয়েট হয় আমরা সেই আইডিয়া ধরেই কাজ শেষ করি। ব্রেক নিলে নিউ কিছু আইডিয়া মাথায় আসবে যাতে আপনি ভাল কিছু সর্টকার্ট পেলেও পেতে পারেন। তাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কাজ করবো না, সেই গো ধরে থাকার বোকামি আপনি করবেন না। তাহলে কাজে ভুলভাল থাকবে কিংবা নিজের অজান্তে ভুল কাজটি বারবার করেতেই থাকবেন। এবার ডিসিশন কার, আপনার?

কিভাবে করে আপনার সময় ম্যানেজমেন্ট করবেন

#৪. যদি কোন কারণে আমাকে কাজের বাহিরে যেতে হয়?

এটা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। যেমন আপনার বোনের বিয়ে, বিয়ে খেতে গেলেন, কোথাও মরা বাড়িতে গেলেন কিংবা কোন জাইগায় ভ্রমন করতে গেলেন। সেইক্ষেত্রে আপনি এক্সট্রা কিছু কাজ করে রাখতে পারেন যদি সময় পান। আর এক্সট্রা সময় না পেলে স্বাভাবিক রুটিন অনুসরণ করুন । আপনার ভ্রমণ কিংবা ঐ কাজের শেষে একটু এক্সট্রা কাজ করে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করবেন। আর যদি এক্সট্রা কাজ না করতে পারেন তাহলে আপনি আগের রুটিন অনুযায়ী কাজ করে যান।

#৫. আপনি নিউ কিছু শিখেন কিভাবে?

এটা আমি এইভাবে দেখি, যে সমস্যা যেইখানে হবে রুটিনের সেইখানে কিছু সময় শিখবো । একটু ক্লিয়ার করি, ধরুন আমি  সাইডবার বানাতে পারি কিন্তু ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাইডবার বানাতে পারি না। আমি রাত ৮ টা তে ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে বসেছি নেক্সট ১ ঘণ্টা ওয়েব ডিজাইন করবো। ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাইডবার বানাতে গিয়ে আটকে গেলাম তখন থেকে আমি এই বিষয় শিক্ষা শুরু করে দিবো রাত ৯ টার মাঝে পারলে পারলাম না পারলে রুটিনের অন্যকাজ শুরু করে দিবো। তারপরের দিন আবার ৮ টাতে যেইখানে গতকাল শেষ করেছিলাম সেইখান থেকে আবার শুরু করবো। এইভাবে যতদিন লাগে শিখতে আমি সেম ভাবে শিখে যাবো।  

#৬. কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি অ্যাক্টিভ থাকেন?

আমি ডেলি ৩০ মিনিট সময় আলাদা করে নিয়েছি। ঐ সময় আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ থাকি বাকি সময় কেউ এসএমএস করলে খুব জরুরী না হলে উত্তর দেই না। সেমভাবে আমি আমার ব্লগের জন্য লিখে থাকি।

#৭. টাইম ম্যানেজ করতে আপনি কোন টুলস বা সফটওয়্যারের সাহায্য নেন কিনা?

আমি ২ টা সফটওয়্যার ইউস করি ওয়েব বেইস, তার নাম হচ্ছে ক) ট্রেলো খ) স্লাক। আপনি কি কি করেন কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

আমরা সবাই সফল হব এই বাসনা বুকে পুষে রাখি। কিন্তু আমাদের নিজেদের তৈরি পারিপার্শ্বিক কারণে ব্যর্থতার দিকে জীবন ধাবিত হয়। এই পারিপার্শ্বিক কারণ তৈরি হয় আমাদের সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার না করার ফলে।

পেশাদার হউন দেখবেন আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে। এখন থেকে রুটিন মানতে অভ্যস্ত হন দেখবেন সময় আপনার  হাতে অটোম্যাটিক ধরা দিবে।

আপনার মনে যা আছে সময়ানুবর্তিতার ব্যাপারে তা আমাকে কমেন্ট করে জানান। আজকে লিখা শেষ করছি সামনে আবার দেখা হবে নতুন কোন লিখা নিয়ে। আর মনে বিশ্বাস রাখুন “ আমার জন্মই সফলতার গল্প জন্ম দিবার জন্য”।

Get more stuff

Subscribe to our mailing list and get interesting stuff and updates to your email inbox.