আপনি কি বাংলা ভাষায় ব্লগিং করার চিন্তা করছেন? বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চ করবেন কিভাবে সে সম্পর্কে আপনার পরিপূর্ণ আইডিয়া আছে? যদি না থাকে, তাহলে আমি আপনাকে সাহায্য করব।
ইংরেজির মত বাংলা ভাষায় সফল ব্লগিং বা ইউটিউবিংয়ের জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চ অত্যন্ত জরুরি। ওয়েবসাইট ব্লগ অনেকেই লিখে থাকেন, কিন্তু সবার ব্লগ গুগলে র্যাঙ্ক হয় না। বাংলায় ব্লগিং ইংরেজিতে ব্লগিংয়ের মত সমান লাভজনক না হলেও সঠিক কিওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে ভালো আয় করা সম্ভব।
কিন্তু বাংলায় কিওয়ার্ড খোঁজার জন্য ভালো এবং ফ্রি টুলের সন্ধান পাওয়াটা মুশকিল। আর আপনি যদি নতুন ব্লগার হন, তাহলে ফ্রি টুলের অভাবে আপনার ব্লগিং শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। ইংরেজি কিওয়ার্ড রিসার্চের টুলে বাংলা লিখলে Invalid বা Not found দেখায়।
তাই আপনার দরকার এমন কিছু টুল, যা দিয়ে আপনি কোন টাকা ছাড়াই বাংলায় প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড খুঁজে নিতে পারবেন। আজকে কথা বলব বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চ করার কৌশল এবং কিছু ফ্রি টুল নিয়ে। তবে তার আগে চলুন জেনে নেই কিওয়ার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত।
কিওয়ার্ড কি?
সহজ ভাষায়, আমরা যখন অনলাইনে কোন কিছু লিখে সার্চ করি তখন আমাদের লেখা শব্দগুলোকে কিওয়ার্ড বলে। যেমন, আমি গুগলে ডিমের পুষ্টিগুণ জানার জন্য সার্চ দিলাম। এখন আমি যে লিখলাম ‘ডিমের পুষ্টিগুণ’ এটাই কিওয়ার্ড। আবার ইউটিউবে ‘স্যামসাং মোবাইল রিভিউ’ লিখে সার্চ দিলে সেটাও আরেকটা কিওয়ার্ড হবে।
কিওয়ার্ড প্রধানত তিন প্রকার। যথা –
- শর্ট টেইল কিওয়ার্ড – সাধারণত তিন শব্দ বা তার কম লেংথের কিওয়ার্ডকে শর্ট টেইল কিওয়ার্ড বলে। একটু আগে ‘ডিমের পুষ্টিগুণ’ বা ‘স্যামসাং মোবাইল রিভিউ’ নিয়ে কথা বলছিলাম, সেগুলো একেকটা শর্ট টেইল কিওয়ার্ড। আমরা মূলত শর্ট টেইল কিওয়ার্ড দিয়ে অনলাইনে সার্চ করি৷ শর্ট টেইল কিওয়ার্ডের প্রতিযোগীতা বেশি থাকা সত্ত্বেও যারা অনেকদিন ধরে ব্লগিং করছেন তারা এই কিওয়ার্ড ব্যবহার করেও কন্টেন্ট বা ওয়েবসাইট র্যাঙ্কে আনতে পারেন।
- লং টেইল কিওয়ার্ড – তিন শব্দের বেশি লেংথের কিওয়ার্ডকে লং টেইল কিওয়ার্ড বলে। শর্ট টেইলের চাইতে লং টেইল কিওয়ার্ডে মাধুর্যতা বেশি থাকে, প্রতিযোগীতা কম থাকে, এবং উপস্থাপনা ভালো হয়। যেমন, ‘বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চ করবেন কিভাবে’ একটি লং টেইল কিওয়ার্ড। যারা ব্লগিংয়ে নতুন আসতে চাচ্ছেন তাদের জন্য লং টেইল প্রযোজ্য।
- এলএসআই কিওয়ার্ড – এলএসআই (LSI) এর পূর্ণ রূপ হল Latent Semantic Indexing। মূল বা শর্ট টেইল কিওয়ার্ডের সাথে সমন্বয় রেখে অনলাইনে যেসব রেজাল্ট দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোকে এলএসআই কিওয়ার্ড বলে। যেমন, আমি গুগলের সার্চ বারে ‘পেঁপের উপকারিতা’ লেখার পরে গুগল আমাকে ‘পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা’, ‘কাঁচা পেঁপের উপকারিতা’, ‘পাকা পেঁপের উপকারিতা’ ইত্যাদি দেখিয়েছে। এই যে গুগল আমার মূল কিওয়ার্ডের সাথে মিল রেখে যা দেখিয়েছে সেগুলোই ছিল এলএসআই কিওয়ার্ড।
কিওয়ার্ড রিসার্চ কি?
রিসার্চ মানে গবেষণা করা। আপনি যখন কোন একটি কিওয়ার্ড নিয়ে গবেষণা করবেন তখন সেটাকে কিওয়ার্ড রিসার্চ বলে। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন যে কিওয়ার্ড নিয়ে কিভাবে গবেষণা করবেন।
খুব সহজ, যেকোন একটি রিসার্চ টুলের সাহায্যে গবেষণার কাজটি করতে পারবেন। গবেষণার সময়ে দেখবেন যে আপনি প্রাথমিকভাবে যে কিওয়ার্ডটি বাছাই করেছেন সেটার সার্চ ভলিউম, ডিফিকাল্টি কত, আপনার এলাকায় সেই কিওয়ার্ডটি কতটুকু জনপ্রিয়, ঐ কিওয়ার্ডের সাথে রিলেভেন্ট আরো কি কি কিওয়ার্ড আছে ইত্যাদি।
একটি কন্টেন্ট তৈরি করার সময়ে আপনাকে দুইটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে –
- আপনি কাদের জন্য কন্টেন্ট লিখছেন,
- যাদের জন্য লিখছেন তাদের সার্চকৃত তথ্য আপনার কন্টেন্টে আছে কিনা।
এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কন্টেন্ট লিখলে আপনি ভালো ভিজিটর পাবেন। কিওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স কি কি লিখে সার্চ করে।
আপনি যদি পাখিপ্রেমীদের জন্য কন্টেন্ট লিখতে চান, সেজন্য আপনাকে রিসার্চ করে আগে জানতে হবে তারা কোন বিষয়গুলো জানার জন্য গুগলের শরণাপন্ন হয়। একবার তাদের সার্চ ইনটেন্ট জানতে পারলে আপনার পক্ষে কিওয়ার্ডের গবেষণা এবং সে অনুযায়ী কন্টেন্ট লেখা সহজ হয়ে যাবে।
কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল কি
যেসব ওয়েবসাইটে কিওয়ার্ডের কম্পিটিশন, ভ্যালু, ডিফিকাল্টি, এবং প্রধান কিওয়ার্ডের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সম্পর্কে জানতে পারা যায় সেগুলোকেই কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল বলে।
কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল দুই ধরণের হয় – ফ্রি এবং পেইড। ফ্রি কিওয়ার্ড রিসার্চ টুলে কোনরকম মাসিক সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই রিসার্চ করা যায়। তবে কিছু কিছু ফ্রি টুলে সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু ফ্রি টুল দিয়ে প্রফেশনালি কিওয়ার্ড রিসার্চ করা সম্ভব।
পেইড টুলে প্রতি মাসে টাকা খরচ করে সাবস্ক্রিপশন কিনতে হয়। যেসব ফ্রি টুলে সীমাবদ্ধতা থাকে সেগুলোতে পেইড ভার্সন দিয়ে ইচ্ছামত কিওয়ার্ড খোঁজা যায়। বাংলা কিওয়ার্ড খুঁজতে পেইড টুলের তেমন একটা দরকার হয় না।
জেনে নিন
বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চ করবেন কিভাবে?
সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার আপনার কন্টেন্ট বা ওয়েবসাইটকে বা উভয়কেই গুগলের প্রথম সারির পেইজে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। একটি কন্টেন্টকে এসইও অপটিমাইজড করতে হলে ছবি, ভিডিও, ব্যাকলিঙ্কের পাশাপাশি কিওয়ার্ডকেও সমান গুরুত্ব দিতে হয়।
কিওয়ার্ড ব্যবহারের বেলায় গাফিলতি না করলে আপনার কন্টেন্টের অন পেইজ এসইও-র কাজ অর্ধেক হয়ে যাবে। ভালো কিওয়ার্ড না থাকলে কন্টেন্টের মান কমে যায়, রিডাররা পড়তে আগ্রহী হয় না, ভিজিটর কমে যায়, এবং সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অভিজ্ঞ ব্লগারদের পক্ষে একটি কন্টেন্ট গুগলে ইনডেক্স করা খুব কঠিন কোন কাজ না। কারণ তারা জানেন কিওয়ার্ড কিভাবে ব্যবহার করলে ভিজিটর আসবে। কিন্তু নতুন ব্লগারদের জন্য সঠিক কিওয়ার্ড নির্বাচন করা পাহাড়ের চূড়ায় উঠার চাইতে কোন অংশে কম না।
আপনি যদি ঠিক করেন বাংলা ব্লগিংয়ে ক্যারিয়ার করবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন আসবে কিভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ এবং ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে আমি বলব, লো-কম্পিটিশন এবং লং টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করে লেখা শুরু করুন।
কারণ এই জাতীয় কিওয়ার্ড ব্যবহারে কোন ধরণের ঝুঁকি বা প্রতিযোগীতা নেই৷ যেসব কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম এবং ভ্যালু দুটোই অনেক বেশি, সেগুলো কন্টেন্টে ব্যবহার করলে ভিজিটর পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এতে করে আপনি যতই ভালো কন্টেন্ট লিখেন না কেন, রিডাররা আগ্রহ নিয়ে পড়বে না।
যেমন, আপনি ‘কফি শপ’ নামক কিওয়ার্ডকে ফোকাস করে লিখতে চাইছেন। কিন্তু এই কিওয়ার্ডটি শর্ট টেইল এবং হাইলি কম্পিটিটিভ। এটা নিয়ে অনেক কন্টেন্ট ইতোমধ্যে অনলাইনে আছে। কাজেই এখন আপনাকে ‘কফি শপ’ নিয়ে রিসার্চ করে কম সার্চ ভ্যালুর কিওয়ার্ড বের করতে হবে।
লং টেইল এবং স্পেসিফিক কিওয়ার্ডে শর্ট টেইলের চাইতে প্রতিযোগীতা কম থাকে বিধায় সেগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ট্রাফিক আনে। তাছাড়া এই ধরণের কিওয়ার্ড ব্যবহারে রিডারের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ হয়। তাই ‘কফি শপের’ বদলে ‘বসুন্ধরা এলাকার ৫টি কফি শপ’কে কিওয়ার্ড ধরে লিখলে আপনার কন্টেন্ট পড়ার জন্য আগ্রহ তৈরি হবে। খেয়াল করুন, এখানে আমি স্থান এবং সংখ্যা নির্দিষ্ট করে লং টেইল কিওয়ার্ড বানিয়েছি।
সার্চ ভলিউম একদমই কম থাকলে সেটা আপনার কন্টেন্টের জন্য ক্ষতিকর হবে। কারণ মানুষ সার্চই করেনা এমন বিষয় নিয়ে কোয়ালিটি কন্টেন্ট লিখলেও মানুষ সেটা পড়বে না। তাই মোটামুটি ভলিউম এবং ডিফিকাল্টি আছে এমন কিওয়ার্ড বাছাই করবেন।
ভলিউম বলতে মাসিক গড় সার্চের সংখ্যাকে নির্দেশ করে। একেক টুলের ভলিউম মেট্রিকস একেকভাবে আসে। সাধারণত ১ হাজার থেকে ১০ হাজার ভলিউমের রেঞ্জকে আদর্শ ধরা হয়। আর ডিফিকাল্টির রেঞ্জ ৩০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে আছে এমন কিওয়ার্ড আপনার কন্টেন্টের জন্য ভালো।
৫টি জনপ্রিয় বাংলা কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল
১. Google Keyword Planner
গুগলের নিজস্ব এই কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল কিওয়ার্ড বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দেয়। বর্তমানে অধিকাংশ ব্লগার Google Keyword Planner ব্যবহার করে কিওয়ার্ড রিসার্চ করেন। এই টুল দিয়ে সঠিকভাবে রিসার্চ করলে খুব দ্রুত কন্টেন্ট র্যাঙ্কে আনা সম্ভব।
গুগলের এই টুলের সবচাইতে বড় সুবিধা হল, এটা লো-কম্পিটিশন কিওয়ার্ড খুব সহজে রিসার্চ করে দেয়। অর্থাৎ আপনি যদি লো-কম্পিটিশনের কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে প্রথমে আপনি যে কিওয়ার্ডটা বাছাই করেছেন সেটা এই টুলের সার্চ বারে বসিয়ে সার্চ করবেন।
এরপরে যখন Keyword Planner সার্চ রেজাল্ট দেখাবে, তখন দেখতে পাবেন আপনার কিওয়ার্ডের সাথে প্রাসঙ্গিক অনেকগুলো কিওয়ার্ড চলে এসেছে। এরপরে দেখে নিন কোন কিওয়ার্ডের কম্পিটিশন কেমন। তখন লিস্ট থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত লো-কম্পিটিশন কিওয়ার্ডটা পেয়ে যাবেন।
উদাহরণ দিয়ে বললে বিষয়টি আপনার কাছে আরো সহজ হয়ে যাবে। যেমন, আপনি প্রাথমিকভাবে বেছে নিয়েছেন ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’। এখন Google Keyword Planner এ এই কিওয়ার্ডটি কপি-পেস্ট করে সার্চ করে অনেকগুলো রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড পেলেন। তার মধ্যে ‘চট্টগ্রামে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামক কিওয়ার্ড পেলেন যার কম্পিটিশন কম। অর্থাৎ এই বিষয়ে অনলাইনে খুব বেশি কন্টেন্ট নেই।
ব্যস, আপনি পেয়ে গেলেন কন্টেন্ট লেখার জন্য উপযুক্ত একটি কিওয়ার্ড। এখন আপনি ‘চট্টগ্রামের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ নিয়ে বিস্তারিত লিখে আপনার কন্টেন্টকে গুগলের প্রথম পেইজে নিয়ে আসতে পারবেন।
কম্পিটিশনের ধরণের পাশাপাশি আপনি আরো দেখতে পাবেন আপনার বাছাইকৃত কিওয়ার্ড সম্পর্কে মাসিক গড় সার্চের সংখ্যা। যেমন, ‘চট্টগ্রামে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ নিয়ে প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ গুগলে সার্চ করে।
সম্পূর্ণ ফ্রি এই রিসার্চ টুলে আপনি কয়েকটি দেশ একসাথে যোগ করে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারবেন৷ এতে করে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে কোন দেশে কোন কিওয়ার্ড কতটা কম্পিটিটিভ। আপনি যদি বাংলাদেশের বাইরে থেকে ব্লগিং করেন তখন এই সুবিধাটা কাজে লাগাতে পারবেন।
আরেকটি বিশেষ সুবিধা হল, এই টুলে ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আপনি একটি কিওয়ার্ড রিসার্চ করার সময়ে ফিল্টার ব্যবহার করে জানতে পারবেন আপনার লোকেশনে ঐ কিওয়ার্ডের কতটা জনপ্রিয় বা প্রাসঙ্গিক। এছাড়াও আপনি ফিল্টারের মাধ্যমে সার্চ রেজাল্টে আপত্তিকর শব্দ বা বাক্যের আবির্ভাব ঠেকাতে পারবেন।
২. Keyword Tool
Google Keyword Planner এর পরে জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে Keyword Tool। অন্যান্য বাংলা কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল থেকে এটা কম সময়ে বেশ ভালো কাজ করে এবং রিসার্চারের প্রত্যাশা পূরণ করে।
Keyword Tool এর বিশেষত্ব কি? এই বিষয়ে যদি জানতে চান, তাহলে বলব এটা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কিওয়ার্ড রিসার্চের সুবিধা দেয়। Keyword Tool এ মোট আটটি ক্যাটাগরি আছে – গুগল, ইউটিউব, বিং, অ্যামাজন, ইবে, প্লে স্টোর, ইনস্টাগ্রাম, এবং টুইটার। যেকোন ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে আপনি কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারবেন।
আপনার যদি ওয়েবসাইট বা কন্টেন্ট রাইটিংয়ের জন্য কিওয়ার্ডের দরকার হয়, তাহলে গুগল ক্যাটাগরিই যথেষ্ট। অবশ্য গুগল ক্যাটাগরি বাই ডিফল্ট করা থাকে, তাই আপনাকে আলাদা করে সিলেক্ট করতে হবে না৷ অথবা আপনি যদি ইউটিউবার হন, তাহলে ইউটিউব ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস করতে পারবেন।
নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি ছাড়াও আপনি যদি যেকোন কিওয়ার্ডের গুগল সাজেশন জানতে চান তখন গুগলে সিলেক্ট করে নিবেন।
Keyword Tool এর আরেকটি বড় সুবিধা হল, এটা বাংলাসহ মোট সাতচল্লিশটা ভাষা সাপোর্ট করে। তবে এই টুলের নির্মাতারা সাপোর্টেড ল্যাঙ্গুয়েজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন। আপনি যখন সার্চ বারে আপনার প্রাথমিক কিওয়ার্ডটা বসাবেন, তার আগে ডান পাশের বারে থাকা ডাউন অ্যারোতে ক্লিক করে Bangladesh-Bengali সিলেক্ট করে নিবেন।
এই টুলের সবচাইতে বড় সমস্যা হল, পেইড ভার্সন ছাড়া পূর্ণাঙ্গ কিওয়ার্ড রিসার্চ করা যায় না। ফ্রি ভার্সনে কিওয়ার্ডের ভলিউম, কম্পিটিশন দেখা যায় না, ঐ অংশটা ঝাপসা থাকে। যদি আপনি সাবস্ক্রাইব করেন তাহলে একদিকে যেমন যত ইচ্ছা তত রিসার্চ করতে পারবেন, আরেকদিকে কিওয়ার্ডের সিপিসি, ভলিউম ইত্যাদি পরিষ্কার দেখতে পাবেন।
বাংলা কন্টেন্টের জন্য কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস ইংরেজির মত ডিপ হয়না বললেই চলে। কাজেই যদি আপনার টাকা খরচ করার মত স্বচ্ছলতা এবং ইচ্ছা না থাকে তাহলে ফ্রি ভার্সন দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।
৩. Keyword Surfer
Keyword Surfer আরেকটি জনপ্রিয় টুল, যেখানে আপনি একদম বিনামূল্যে বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারবেন। এটা ব্যবহার করা যেমন সোজা তেমনি বেশ লাভজনক।
অন্যান্য টুলগুলোতে দেখা যায় যে ব্রাউজারে টুল ওপেন করে তারপরে কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস করতে হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে Keyword Surfer পুরোপুরি ভিন্ন। আপনাকে আলাদা করে টুল ওপেন করতে হবে না।
আপনার ডেক্সটপ বা ল্যাপটপে থাকা গুগল ক্রোম ব্রাউজারটি ওপেন করে নিবেন। তারপরে Keyword Surfer Extension ডাউনলোড করে অ্যাক্টিভেট করে নিলেই অটো কিওয়ার্ড রিসার্চের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
এক্সটেনশনটা অ্যাক্টিভেট করার পরে ক্রোম ব্রাউজারে কিছু একটা লিখে সার্চ করে দেখুন। এবারে দেখবেন গুগল তার সার্চ বক্সে বিভিন্ন রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড দেখাচ্ছে, তার সাথে সাথে প্রতি কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউমও দেখাচ্ছে। ভলিউমের ব্যাপারটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সার্ফার এক্সটেনশনের কারণে।
এই টুল আপনাকে সহজে কোন কিওয়ার্ডের ভলিউম, কম্পিটিশন, সিপিসি, এসডি দেখাবে। পাশাপাশি আপনার কম্পিটিটটরদের কনটেন্ট কোয়ালিটি কেমন সে সম্পর্কেও বেশ ভালো আইডিয়া পাবেন। এতে করে তাদেরকে বিট করা কঠিন মনে হবে না।
৪. Ubersuggest
এই টুল দিয়ে শুধু বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চ না, বরং আরো নানা সুবিধা পাবেন। কোন কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম, এসইও ডিফিকাল্টি, সিপিসি, ব্যাঙ্কলিঙ্ক, ট্রেন্ড ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পাবেন Ubersuggest ব্যবহার করে।
নীল প্যাটেল ব্লগসের এই জনপ্রিয় টুল এক কথায় ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী। আপনার যদি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে ভিজিটর বাড়ানোর সমস্ত পন্থা এখান থেকে শিখতে পারবেন।
আপনি বহুদিন ধরে কন্টেন্ট লিখছেন কিন্তু ভালো ট্রাফিক পাচ্ছেন না – এমন সমস্যারও সুরাহা করে দিবে Ubersuggest। এখানকার Top SEO pages সেকশন থেকে আপনি জানতে পারবেন আপনার কম্পিটিটরদের সম্পর্কে। প্রতিপক্ষের কন্টেন্ট অ্যানালাইসিস দেখে আপনিও নিজের কন্টেন্টের মান বাড়াতে পারবেন। তাছাড়া প্রতিযোগীর সাইটের ডোমেইন লিঙ্ক কপি-পেস্ট করেও কিওয়ার্ড সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।
কিওয়ার্ড এবং ওয়েবসাইটের জন্য সহায়ক এই টুলটি আপনি ফ্রি ও পেইড দুইভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন। স্বভাবতই ফ্রি ভার্সন দিয়ে স্বাধীনভাবে কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস অসম্ভব, কারণ প্রতিদিন মাত্র তিনটার বেশি কিওয়ার্ড রিসার্চের সুযোগ পাবেন না।
ছোট্ট একটি পরামর্শ দেই, আনলিমিটেড রিসার্চের জন্য পেইড ভার্সন কেনার দরকার নেই। যখন রিসার্চ করবেন তখন আলাদা আলাদা আরো দুই-তিনটি ব্রাউজারে টুলটি চালাবেন। তাহলে তিনবারের বেশি কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস করতে পারবেন। আর এই টুলটা এক্সটেনশন হিসেবে ক্রোম ব্রাউজারে অ্যাড করতে পারেন বা ব্রাউজারে আলাদা করেও ব্যবহার করতে পারেন।
৫. Keyworddit
Keyworddit নামক টুলটার সাথে Reddit এর সরাসরি সংযোগ আছে। Reddit এ যে সকল কিওয়ার্ড সার্চ করা হয়ে থাকে সেগুলোই আপনি এখানে খুঁজে পাবেন, অন্যান্য রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড এবং সেগুলোর সার্চ ভলিউমসহ।
আপনি যদি নতুন ব্লগার হন এবং নিশ সম্পর্কে আপনার ধারণা শূন্যের কোঠায় থাকে, তাহলে Keyworddit হবে আপনার জন্য উপযুক্ত একটি রিসার্চ টুল। এখানে আপনি আপনার ব্লগিংয়ের নিশ রিলেটেড অনেক কিওয়ার্ড খুঁজে পাবেন। এতে করে আপনার কন্টেন্ট লিখতে সুবিধা হবে।
যেমন, আপনি ঠিক করলেন আপনি গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে লেখার জন্য নতুন একটি ওয়েবসাইট বানাবেন। কিন্তু আপনি জানেন না অ্যাডসেন্স নিয়ে লিখতে গেলে কোন কোন বিষয়ের উপর ফোকাস করতে হবে। তখন আপনি ‘গুগল অ্যাডসেন্স’কে ফোকাসড কিওয়ার্ড বানিয়ে Keyworddit এ সার্চ করবেন।
এরপরে সার্চ রেজাল্ট থেকে জানতে পারবেন অ্যাডসেন্স সম্পর্কিত কোন বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ অনলাইনে সার্চ করে। একবার ধারণা পেলে আপনার জন্য লিখতে সুবিধা হবে। এভাবে আপনি পছন্দমতো নিশের কিওয়ার্ডগুলো বের করতে পারবেন।
কাজেই বাংলা ভাষায় ব্লগিং ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য এই ইউনিক এবং ফ্রি টুলটি হতে পারে চমৎকার একটি সমাধান।
শেষ কথা
আশা করি আমার লেখা থেকে কিওয়ার্ড সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এবং বাংলায় কিওয়ার্ড রিসার্চের কৌশল জানতে পেরেছেন। কিওয়ার্ড রিসার্চ শুধু অন পেইজ এসইও-র জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা একইসাথে আপনার কন্টেন্টের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং ভিজিটর আনবে।
টুলের সাহায্যে রিসার্চ করতে সময় কম লাগলেও কিওয়ার্ড খোঁজা কিন্তু সহজ কোন কাজ না। ভালো মানের কন্টেন্ট বানানোর জন্য যথেষ্ট সময় নিয়ে কিওয়ার্ড খুঁজতে হয়৷ একবার কিওয়ার্ড রিসার্চ শিখতে পারলে পরবর্তীতে কম সময়ে কাজটা করতে পারবেন।
সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করে নিয়মিত ভালো কোয়ালিটির কন্টেন্ট লিখলে আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক করতে বেশি সময় নিবে না। আশা করছি উপরে বর্ণিত ৫টি ফ্রি টুল আপনার প্রফেশনালি কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস করার সুযোগ দিবে।
আপনার কাছে কি বাংলা কিওয়ার্ড রিসার্চ সম্পর্কে আরো কোন তথ্য আছে? থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।